জহির রায়হান, ময়মনসিংহ :
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা জামালপুরগামী কমিউটার ট্রেনে ডাকাতি ও দুইজন খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১৪)। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ময়মনসিংহ নগরীর শিকারীকান্দার আশরাফুল ইসলাম স্বাধীন (২৬), বাঘমারার মাকসুদুল হক রিশাদ (২৮), মোঃ হাসান (২২), মোহাম্মদ (২৫) ও ধামাইলের রুবেল মিয়া (৩১)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন র্যাব-১৪ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হান্নানুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা হতে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেন জামালপুর স্টেশনে পৌঁছালে ট্রেনের যাত্রীরা ট্রেনের ছাদ থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়তে দেখেন এবং ট্রেনের ছাদ থেকে গুরুতর আহত তিনজনকে উদ্ধার করেন। আহতদের তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার দুজনকে মৃত ঘোষণা করে। এ ঘটনায় ময়মনসিংহ জেলার রেলওয়ে থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু হয় যার মামলা নং-০৫/১৩ তারিখ- ২৪/০৯/২০২১খ্রিঃ ধারা- ৩৯৬ পেনাল কোড।
তিনি আরও জানান, ট্রেনে ডাকাতির উদ্দেশ্যে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ০৪ (চার) জন পেশাদার ডাকাত দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনে উঠে। রিশাদ, হাসান এবং স্বাধীন টঙ্গী স্টেশন থেকে তাদের সাথে যুক্ত হয়। ট্রেনটি ফাতেমা নগর স্টেশনে থামলে তাদের সাথে যোগ দেয় মোহাম্মদ ও তার একজন সহযোগী। ট্রেন স্টেশন ছেড়ে চলতে শুরু করলে তারা ইঞ্জিনের পরের বগি’র ছাদে বসে থাকা যাত্রীদের মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন লুট করা শুরু করে। ডাকাতির একপর্যায়ে ভিকটিম মৃত মোঃ সাগর মিয়া ও নাহিদ বাধা দিলে তাদের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু হয় এবং ডাকাতরা তাদের হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে ভিকটিমদ্বয়ের মাথায় এলোপাথারীভাবে আঘাত করে। মৃত সাগর ও নাহিদ যখন আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ট্রেনের ছাদে লুটিয়ে পড়ে তখন ডাকতরা ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে ঢোকার পূর্বে সিগন্যালে ট্রেনের গতি কমলে ট্রেন হতে নেমে যায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি এরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র এবং এই চক্র নিয়মিতভাবে ডাকাতি ও ছিনতাই করে আসছে। এরা ঢাকার কমলাপুর, এয়ারপোর্ট ও টঙ্গী রেলস্টেশন হতে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ট্রেনে উঠত এবং তাদের কিছু সহযোগী গফরগাঁও ফাতেমা নগর স্টেশন হতে ট্রেনে উঠে সম্মিলিতভাবে ডাকাতি ও ছিনতাই করে ময়মনসিংহ স্টেশনে নেমে যেত। ঘটনার দিন তারা ছিনতাইয়ের পরিবর্তে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। তারা ছোট ছোট উপ-গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ডাকাতি ও ছিনতাই করত। এই ছোট ছোট উপ-গ্রুপগুলো কেউ টার্গেট শনাক্ত করত, কেউ নিরাপত্তার বিষয় দেখত, কেউ লুন্ঠিত মোবাইল ও অন্যান্য লুন্ঠিত মালামাল সংগ্রহ করে বিক্রি করত আর বাকীরা সরাসরি ডাকাতির কাজে সম্পৃক্ত থাকত। এই চক্রটি তাদের ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন অস্ত্র ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের রেললাইনের বিভিন্ন স্থানে তাদের পূর্ব-নির্ধারিত জায়গায় লুকিয়ে রাখত। উক্ত ঘটনায় গ্রেফতারকৃত রিশাদ, স্বাধীন, মোহাম্মদ ও অজ্ঞাতনামা কয়েকজন সরাসরি ডাকাতির কাজে সম্পৃক্ত ছিল, হাসান টার্গেট শনাক্তের কাজে যুক্ত ছিল, রুবেল লুন্ঠিত মোবাইল ও অন্যান্য লুন্ঠিত মালামাল স্বল্পমূল্যে এই চক্রের কাছ থেকে সংগ্রহ করত এবং অন্যদের কাছে বেশী মূল্যে বিক্রি করে মুনাফা লাভ করত। পাশাপাশি সে এই চক্রের পৃষ্ঠপোষক বলে জানা যায়। উল্লেখ্য, রিশাদ এই সংঘবদ্ধ চক্রের মূল হোতা। তার নামে ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার মামলা নং-০২/৩০ তাং-০৯/১১/২০১৯খ্রিঃ ধারা-৩৯২ দন্ডবিধি ও ময়মনসিংহ সদর থানার মামলা নং-২২ তাং-০৫/১০/২০১২খ্রিঃ ধারা-১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯(১) এর ১(ক) মামলা রয়েছে এবং বিভিন্ন মেয়াদে সে ০২ বছরের অধিক সময় কারাগারে ছিল। ধৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।